সুমাইয়া হোসেন লিয়াঃ কুচ্চিত্তিনি কে চিনেন? যাকেই জিজ্ঞাসা করিনা কেন, ৮০-৯০ শতাংশ উত্তরে বলবে- “সেটা আবার কে?” ভাষা দুর্বোধ্য নয়, মানুষটাও অচেনা নয়- তাহলে রহস্যটা কোথায়? আসল রহস্য হলো যেই নামে আপনি তাঁকে চিনেন এটি তাঁরই ডাকনাম মানুষটি আর কেও নয়-ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম জাদুকর, যাঁর জাদুকরি মুগ্ধতার শতাব্দীতে আপনার-আমার জন্ম ।লুইস লিওনেল এন্ড্রেস মেসি ওরফে কুচ্চিত্তিনি! হ্যাঁ, সেই মেসি! যিনি ১৯৮৭ সালে আর্জেন্টিনার একটি হত দরিদ্র পরিবারে জন্মেছিলেন । যাঁর বৃদ্ধিজনিত রোগ তাঁকে একদম দমিয়ে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কাওকে কখনো ঠকাননা, তেমনি তাঁকেও ঠকাননি! তাঁর হরমোন জনিত রোগ, দারিদ্র্যতা সবকিছু ছাপিয়ে সৃষ্টিকর্তা তাঁকে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন এমন এক অদম্য শক্তি, যা একদম অকৃত্রিম-ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা! আজ সেই ক্ষমতার প্রয়োগে বাম পায়ের জোরে তিনি হয়ে উঠছেন সেরার চেয়েও সেরা”! এই ২০১৭-১৮ মৌসুম এ এই প্লেয়ার ৩৯টি গোল করেছে সব মিলিয়ে যার সাথে ১৬ টি এসিস্ট ও আছে! তাঁর খেলার কোনো জুরি নেই, কিন্তু মানুষ মাত্রই ভুল হয়। তেমনি ৬ টি পেনাল্টির মধ্যে ৩ টি মিস করেছেন এই খেলোয়াড়। এইবছরে লা লিগার টেবিলের শীর্ষে আছে অপরাজিত বার্সেলোনা! এর পিছনে মেসির গোল এবং এসিস্টের ভূমিকা এক কথায় অতুলনীয়! কখনো রক্ষাকারী, কখনোবা বিজয়ের নায়ক, কখনোবা গর্ত থেকে টেনে তোলা নেতা- সবই এই লিওনেল মেসি! এল এম টেন এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণের একটা হলো, এই খেলোয়াড় কখনো দলের ভিতরে নিজেকে আলাদা করে দেখেনা, স্বার্থপরতা নেই বলেই হয়তো এখনো তাঁর জাদুর ঝুলি পরিপূর্ণই আছে। রেকর্ডের ঝুড়িতে প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু ঢুকছে, এইবারও তার ব্যতিক্রম না, এই মৌসুম এই অর্জন করে নিয়েছেন। উয়েফা ক্লাব কম্পিটিশন এর ১০০তম গোলটিও করেছেন ১৭ সালের ১৮ই অক্টোবর। যদিও এটি ২য় প্লেয়ার হিসেবে এই কম্পিটিশনের শততম ক্লাবে ঢোকা। এর আগে রোনাল্ডো ২১টি ম্যাচ বেশি খেলে এই অর্জন লাভ করে! ২০১৭ সালের “বেস্ট ফিফা মেন’স এওয়ার্ড এও ২য় পুরষ্কার অর্জন করেন। ২০১৭ সালের ৪ঠা নভেম্বর এই ভিনগ্রহী আখ্যা পাওয়া খেলোয়ার তাঁর ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে ৬০০তম ম্যাচ খেলতে মাঠে নামেন। এরপর ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে বার্সেলোনার হয়ে লা লিগার ৪০০তম ম্যাচ খেলতে মাঠে নামেন এই তুখোড় খেলোয়াড়। সেইদিন তিনি ১৪৪ তম লিগ এসিস্ট এবং ৩৬৫ তম লিগ গোল করেন এই ক্লাবের হয়ে। একই ক্লাবের হয়ে ৩৬৬টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন এই লিগের! এর আগে ৩৬৫ গোল করে জার্ড মুলার এই রেকর্ডধারী ছিলেন। ৪ঠা মার্চ, মেসি তাঁর ক্লাবের ৬০০ তম সিনিয়র ক্যারিরার গোল করেন তাও এক ফ্রি কিক থেকে। ১৪ই মার্চ, মেসি তাঁর ক্যারিরারের ৯৯ এবং ১০০ তম চ্যাম্পিয়নলীগ গোল করেন এবং নিজ গ্রাউডে ৩-০ স্কোরে চেলসি এর বিপক্ষে জয় লাভ করেন। এটি ছিল মেসির ৩য় পুত্র সিরোর জন্মের পর প্রথম খেলা ম্যাচ। এই শততম গোলের ক্ষেত্রেও দুর্ভাগ্যবশত দ্বিতীয় প্লেয়ার হিসেবে এই অর্জন লাভ করেন।যদিও এটি রোনাল্ডো এর চেয়েও কম বয়সে, কম ম্যাচ খেলে, কম সময় মাঠে থেকে এবং কম সংখ্যক শট খেলে অর্জন করেন। তাঁর উদ্বোধনী গোলটি হয়েছিল তাঁর মাঠে নামার মাত্র ২ মিনিট ৮ সেকেন্ড পর; যা তার জীবনের সবচেয়ে দ্রুত সময়ে করা গোল। ৭ই এপ্রিল এই অনবদ্য খেলোয়াড় তাঁর এই মৌসুমের হ্যাটট্রিক করেন এবং ৩-১ জয়ে মাঠ ছাড়েন। এখন ভাবছেন এত গুণগান কেন? কারণ আজ রাত দেড়টায় কোপা ডেল রে ফাইনাল খেলবে বার্সেলোনা এই ক্লাবটিই রয়েছে এই প্রতিযোগিতার শীর্ষে! সর্বাধিক জয় লাভ করেছে এই ক্লাবটি। গতবারের চ্যাম্পিয়নও এই ক্লাব! আর আজকের প্রতিপক্ষ? সেভিয়া! আজকের ম্যাচটিতে জিততে পারলে এবং আগামী ২৯শে এপ্রিল লা লিগার ম্যাচটি জিততে পারলে ডাবল শিরোপা ঘরে তুল্বে এই ক্লাব! আর সেই জন্য জয়ের নায়ক হিসেবে সবচেয়ে যাঁর নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে সবার মনে- তা হলো ‘মেসি’! দেখা যাক এই কুচ্চিত্তিনি দ্যা ‘সেভিওর’ আদৌতে এবারও ক্লাবের অর্জনের সেরা নায়ক হিসেবে নিজের নামটা পুনরায় খোঁদাই করতে পারে কিনা ।