নারায়ণগঞ্জ বাণী নউিজঃ প্রশ্ন ফাঁস এড়াতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থেকে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) বাদ দিয়ে পুরনো পদ্ধতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন বলে মনে করছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তিনি বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁস এড়াতে ‘গুণীদের পরামর্শে’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এখন আগের মতই সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি গত সোমবার এক আদেশে জানায়, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এবার আর বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) প্রশ্ন থাকবে না। শতভাগ ‘যোগ্যতাভিত্তিক’ প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই ‘যোগ্যতাভিত্তিক’ প্রশ্ন পদ্ধতিতে প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর লেখা, শূন্যস্থান পূরণ, সংক্ষিপ্ত কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন এবং রচনামূলক প্রশ্ন থাকতে পারে। আগামী নভেম্বরে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষার প্রশ্নের কাঠামো এবং নম্বর বণ্টন কেমন হবে, তা শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রাথমিক বৃত্তির ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো নিয়ে ‘জ্ঞানী-গুণী-বিদগ্ধদের’ মধ্যে যেসব আলোচনা হয়েছে, সেখানে অনেক পরামর্শ পাওয়া গেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যেমন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সর্বোচ্চ পদাধিকারী; তিনিও সাজেশন দিয়েছেন। লেখায়, বক্তব্যে এই কথাগুলো শুনতে শুনতে.. আমরা চাই একটা নকলমুক্ত পরিবেশে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষা দিক। ছাত্ররা প্রশ্ন ফাঁসের এই জ¦ালা নিয়ে না জ¦লুক। শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের যে প্রাণান্তকর চেষ্টা, তার মধ্যে এই জাতীয় কর্মকাÐগুলো বিষফোঁড়ার মত। এটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই ভাবনাটি নিয়ে আমরা ভাবছি। মন্ত্রী বলেন, আগের সব ব্যবস্থাই যে মন্দ ছিল- তা নয়। আগে যে কোনো একটা প্রশ্ন করে বলা হত- তিন লাইন বা পাঁচ লাইন লেখ। তাতে ওই ছেলে বা মেয়েটির লেখা ও পড়া এবং বোঝার ক্ষমতা পাওয়া যেত। সেই পদ্ধতিতে যাবার জন্য মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, এটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আমরা আগাম ঘোষণা দিয়েছি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। ৃ সমস্ত স্কুলে নির্দেশনা দেওয়া হবে। প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ বন্ধ করার জন্য এইচএসসিতে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আমরা সেই দিকে যাচ্ছি। গতবছর প্রাথমিক সমাপনী পারীক্ষার প্রায় সব বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষার আগের রাতে বা পরীক্ষার সকালে ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জেএসসি-জেডিসি এবং এ বছরের এসএসসি পারীক্ষাতেও। প্রশ্নফাঁস মহামারির আকার ধারণ করায় প্রশ্ন পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এতদিন প্রাথমিক সমাপনীতে বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ২০, গণিতে ২৪ এবং সমাজ, বিজ্ঞান ও ধর্মে ৫০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হত। ফলে পরীক্ষার ঘণ্টাখানেক আগে প্রশ্ন ফাঁস হলেও ফলাফলে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি থেকেও প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। মন্ত্রী বলেন, পরিপত্র জারি করা হয়েছে। স্কুলগুলোতে মেসেজ চলে গেছে। স্কুলে বাচ্চাদের বলেছি যেন পুরোপুরি সিলেবাসের উপর থাকে। যাদের জানার দরকার, বিশেষ করে শিক্ষকরা, সবাই জেনে গেছেন। ফিরে গেলে পুরোটাই ফিরে যাব।