সর্বকালের সেরা পাঁচ ফুটবল খেলোয়াড়

লেখা : শরীফ মাসুদুর রহমান (সৈকত)
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফূটবল। একটি দেশ চালাতে যেমনি শাসকদের প্রয়োজন হয়, তেমনি ফুটবল বিশ্বকে এ যাবৎকাল পর্যন্ত শাসন করে রেখে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন সেরা খেলোয়াড়েরা। আজ আমরা ৫ জন ফুটবল রাজাদের সম্পর্কে জানব। —

১. পেলে– ফুটবলের সর্বকালের রাজা, কালামানিক যা ই বলা হোক না কেন তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও তিনবার বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার।পেলে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই মারাকানায়, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। ২-১ ব্যবধানে হারা সেই ম্যাচে ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে ব্রাজিলের পক্ষে প্রথম গোল করে পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার স্থান দখল করেন।১৯৭০ সালের আগের বিশ্বকাপের ব্যর্থতা মুছে ফেলে আবারও শিরোপা জিতে নেয় ব্রাজিল। টানা চারটি টুর্নামেন্টের তিনটিরই ট্রফি ওঠে তাদেরই হাতে। পেলে খেলেন তাঁর চতুর্থ বিশ্বকাপের শেষটি। প্রতিটা ম্যাচে গোল করেন জেয়ারজিনহো। ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে গুঁড়িয়ে দেয় ‘ক্যাপ্টেন’ কার্লোস আলবার্তো। দল তিনবার শিরোপা জেতায় জুলে রিমে ট্রফিটা একেবারেই দিয়ে দেওয়া হয় ব্রাজিলকে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন পেলে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের পর নিজেকে সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করেন পেলে।

২. ডিয়েগো ম্যারাডোনা– ফুটবল বিশ্বের একজন অন্যতম ও সেরা কিংবদন্তি হিসেবে ম্যারাডোনা বিশ্বখ্যাত। ম্যারাডোনাই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুইবার স্থানান্তর ফি এর ক্ষেত্র বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। প্রথমবার বার্সেলোনায় স্থানান্তরের সময় ৫ মিলিয়ন ইউরো এবং দ্বিতীয়বার নাপোলিতে স্থানান্তরের সময় ৬.৯ মিলিয়ন ইউরো। নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স, বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া এবং নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন। ক্লাব পর্যায়ে তিনি তার নাপোলিতে কাটানো সময়ের জন্য বিখ্যাত, যেখানে তিনি অসংখ্য সম্মাননা জিতেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি ৯১ খেলায় ৩৪ গোল করেন।

তিনি চারটি ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন। যার মধ্যে ছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপ, যেখানে তিনি আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং দলকে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেন। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বর্ণ গোলক জিতেন তিনি। প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ২–১ গোলে জয় লাভ করে। আর্জেন্টিনার পক্ষে উভয় গোলই করেন মারাদোনা। দুইটি গোলই ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে দুইটি ভিন্ন কারণে। প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ডবল যা “হ্যান্ড অফ গড” নামে খ্যাত। দ্বিতীয় গোলটি মারাদোনা প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে ড্রিবলিং করে পাঁচজন ইংরেজ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে করেন। ২০০২ সালে ফিফাডটকম এর ভোটাররা গোলটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসাবে নির্বাচিত করে।

৩. রোনালদিনহো– ব্রাজিলের বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড়। ইদানীং কালের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ফুটবলার হিসেবে তিনি স্বীকৃত। তিনি স্পেনের বার্সেলোনা ক্লাবে খেলতেন।তিনি বেশিরভাগ সময় আক্রমনাত্বক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন। তিনি তার ক্যারিয়ারে ইউরোপীয় ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই,বার্সেলোনা এবং মিলানে খেললেও তিনি মুলত ব্রাজিলের জাতীয় দলের খেলোয়ার ছিলেন। তিনি প্রায়ই তার সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়ার হিসেবে বিবেচিত হতেন। রোনালদিনহো দুইটি ফিফা ওয়ার্ল্ড প্ল্যেয়ার এবং একটি ব্যালন ডি অর পুরষ্কার লাভ করেন।

৪. ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্দো– রোনালদো ইংল্যান্ডে খেলা প্রথম খেলোয়াড় যিনি প্রধান ৪টি পিএফএ এবং এফডব্লিউএ পুরস্কার জিতেছেন, যা তিনি ২০০৭ সালে করেছেন। রোনালদো ২০০৮,২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার বালোঁ দ’অর জিতেছেন। তিনিই একমাত্র পর্তুগিজ যিনি এই পুরস্কার ৫ বার জিতেছেন। তিনি ২০০৭ ও ২০০৯ সালে বালোঁ দ’অর এবং ২০১১ ও ২০১২ সালে ফিফা বালোঁ দ’অর ২য় স্থান লাভ করেন। তিনি ২০০৮ ও ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পুরস্কার লাভ করেন।২০০৮ সালে তিনি ৪টি প্রধান পিএফএ এবং এফডব্লিউএ ট্রফির মধ্যে ৩টি জেতেন এবং ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার, ফিফপ্রো প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার, ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার এবং ওনজে দ’অর অ্যাওয়ার্ড জেতেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে রোনালদোকে এফডব্লিউএ প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। রোনালদো ২০০৯ সালে সেরা গোলের জন্য প্রথম পুস্কাস অ্যাওয়ার্ড জেতেন।রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ লীগ গোল করেছেন এবং তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি লা লিগায় প্রত্যেক দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন। এছাড়াও তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল ও লা লিগায় মিনিট প্রতি সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডের অধিকারী। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তার ৩০০তম ক্লাব গোল পূর্ণ করেন। ২০১৬ সালে পর্তুগালের হবে ইউয়েফা ইউরো কাপ জেতেন। যার কারণে তিনি সময়ের সেরা এমনকি সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে বিবেচিত হন।

৫. লিওনেল মেসি– বর্তমান কালের সবচেয়ে সেরা ফুটবলার হলেন লিও মেসি। তার নৈপুণ্যের কারণে তাকে ভিনগ্রহের মানুষ হিসেবে অনেকে আখ্যায়িত করে। একজন আর্জেন্টাইন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় যিনি স্পেনের সর্বোচ্চ স্তরের পেশাদার ফুটবল লীগ প্রতিযোগিতা লা লিগাতে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এবং আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের পক্ষে একজন ফরোয়ার্ড (আক্রমণভাগের খেলোয়াড়) হিসেবে খেলেন। তিনি বর্তমানে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অধিনায়ক। মাত্র ২১ বছর বয়সেই মেসি বালোঁ দর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় পুরস্কার দু’টির জন্য মনোনীত হন। পরের বছর তিনি প্রথমবারের মত বালোঁ দর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেন। ২০১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বালোঁ দর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় পুরস্কার দুটিকে এক করে নাম দেওয়া হয় ফিফা বালোঁ দর। উদ্বোধনী বছরেই এই পুরস্কার জিতেন তিনি। এরপর ২০১১ এবং ২০১২ সালের পুরস্কারও জিতেন তিনি। তিনি এখন পর্যন্ত মোট পাঁচবার ফিফা ব্যালন ডি অর জেতেন। ২০১১–১২ মৌসুমে তিনি ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন। ২৪ বছর বয়সেই তিনি সব ধরণের অফিসিয়াল প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন। ২৫ বছর বয়সে তিনি লা লিগায় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ২০০ গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ক্লাব ও জাতীয় দল – উভয় মিলিয়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের ৪০০তম অফিসিয়াল গোল করেন। একই বছরের নভেম্বরে তিনি লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লীগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন। ২০১৭ সালের মে মাসে তিনি বার্সেলোনার হয়ে নিজের ৫০০ তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অনেক ধারাভাষ্যকার, কোচ এবং খেলোয়াড় তাকে বর্তমান সময়ের সেরা এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে দাবী করে থাকেন।বার্সেলোনার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলা কাতালুনিয়া রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন আমি তার মস্তিষ্কে ঢুকে দেখতে চাই সে আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার হয়ে এত চাপ কি ভাবে সামলায়। মেসি ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র খেলোয়াড় যিনি টানা পাচটি ফিফা / বালোঁ দর পুরস্কার জিতেছেন। এছাড়া প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি তিনটি ইউরোপীয়ান গোল্ডেন শু পুরস্কারও জিতেছেন। বার্সেলোনার হয়ে মেসি আটটি লা লিগা, পাঁচটি কোপা দেল রে, সাতটি স্পেনীয় সুপার কোপা, চারটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ, তিনটি উয়েফা সুপার কাপ এবং তিনটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছেন।

মেসি প্রথম এবং একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা চারটি চ্যাম্পিয়নস লীগে সর্বোচ্চ গোল করেছেন[১৪][১৫] এবং প্রতিযোগিতায় তার সর্বোচ্চ হ্যাট্রিকেরও রেকর্ড রয়েছে (৭টি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর)। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের মার্চে চ্যাম্পিয়নস লীগে বেয়ার লেভারকুজেনের বিপক্ষে খেলায় পাঁচ গোল করে মেসি ইতিহাস গড়েন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রিয়াল ছাড়ছে রোনালদো

মাহরেজ বাহার