লেখক: ইউসুফ আলি নাইম
আমি আর প্রবির সাহেব মুখমুখি বসে আছি।সে অতি আগ্রহের সাথে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বোঝার চেষ্টা আমি কি বলতে চাই ..
“তো ইয়ান সাহেব বলুন।কি বলবেন।”
“আমি আসলে জানি না কি ভাবে বা কি আপনাকে বলব।সব কিছু অগোছালো লাগছে। “
“প্রথমত আমার টেবিলের উপর এক গ্লাস পানি আছে ; দেখছেন? “
“জি,সেটাতো দেখছি।”
“আমাকে বলুন পানির রংটা কেমন লাগছে আপনার কাছে।”
“তার মানে!পানিতো পানিই এর আবার রঙ কি।”
“তার মানে এর রঙ সচ্ছ?”
“অবশ্যই….”
“আপনার সমস্যাটা কি সেটা বলুন। আরাম করে বলুন। এই মাত্র তৈরি হওয়া প্রশ্নে আমার প্রতি আপনার খানিক বিরক্ত। এতে আপনার মস্তিষ্ক কিছুটা উত্তেজিত। এটা করা দরকার ছিল। কারণ আপনি গভীর ভাবে নিমজ্জিত। শুরু করুন.. ”
“আপনি কি আসলেই আমার সমস্যাটার সমাধান দিতে পারবেন।”
“মনে হয় পারব না। আপনার সমস্যাটা সম্পূর্ণ আপনার মস্তিষ্কের সাব-কন্সিওয়াস মাইন্ডেড।
সত্যি বলতে এটা কোন সমস্যা না। আপনার ঘোর কেটে গেলেই দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে.. কিছুই আমার হাতে নাই.. হাহাহা..”
“তাহলে আর বলে কি লাভ।”
“আমরা লাভ ছাড়াও অনেক কিছুই করি। অনেক কথা বলি। যেমন ধরুন আপনি কাওকে জিজ্ঞাস করলেন তার বাড়িতে আজ কি রান্না হয়েছে।এতে আপনি আপনার কোন প্রয়োজন আমাকে দেখাতে পারবেন না। কাজেই… আর আমি আপনাকে জোর দিচ্ছি না।আপনি এসেছেন বলতে চাইলে বলুন। না বলতে চাইলে নাই।”
পুরো ঘরে কোন জানালা নেই। উপর থেকে কিছু বাতি ঘরে আলো ছড়াচ্ছে। যার সামনে বসে আছি সে নাকি মনো-বিজ্ঞানী। যাকে বলে সাইকোলজিস্ট। আজব শ্রেণিরর লোক। শুনেছিলাম মনো-বিজ্ঞানীরা পাগল টাইপ হয়। যা এখন অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারছি। কিছুই করার নেই। আমাকে যদি কেও সাহায্য করতে পারে সে এই বিরক্তিকর মানুষটাই।
”সত্যি বলতে আসলেই আমার সমস্যাটা মনের।”
”হুম”
”আমি জানি না আমি এখানে কিভাবে এলাম। আমার যত দূর মনে পরে আমি ঘুমাচ্ছিলাম। ”
”মিথ্যা কেনো বলছেন। আপনি নিজে আমার কাছে এসেছেন।”
”তা হয়তো এসেছি। কিন্তু.. ”
”ইতস্ত না করে পুরো ঘটানাটা বলুন।”
তাকে আর কি বলব আমি নিজেই জানি না আমি কি করছি। আমি কেন এখানে। মনটা কেমন যেন করছে।
“কিছু দিন থেকেই মনটা কেমন যেন খারাপ লাগছে। কিছুটা চিন্তিত। আজ দুপুরে আকাশটা দেখে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। প্রচুর বৃষ্টি। ঝড়ো হাওয়া। কোন কাজ নেই। বিকেলে বাইরে যাওয়ারও ইচ্ছা ছিলোনা। তাই বিছানায় শুয়ে ছিলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়ি খেয়াল নেই। ”
“হুম, ইন্টারেস্টিং। তারপর..”
“ঘুম ভাঙার পর, আসলেও কি ভেঙেছিল কি না কএএ জানে! দেখি আমার চারদিকে সব সাদা হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ধু ধু মরুর বুকে আমি একা। কিন্তু আমার চারপাশ ঠিকই ছিল। আমার বিছানা, তার পাশের টেবিল,চেয়ার সব একই আছে শুধু আমার জানালার বাইরে সব সাদা হতে শুরু করেছে। আমি জানালার দিকে তাকিয়ে ভাবছি এসব কি দেখছি। হঠাৎ … ”
“মাঝ পথে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আগে বুঝতে দিন; আপনি ঘুমিয়া ছিলেন। কিন্তু এখন বলছেন আশেপাশের সব সাদা আর অদ্ভুত হতে শুরু করেছে। হাও স্রেইঞ্জ! আগেও কি এমন হয়েছে? ”
” জি হয়েছে।”
“ওকে কেয়ারি অন.. ”
এমনি আমি মানসিক চাপের মাঝে আছি আবার মাঝ পথে থামিয়ে দেয়ায় আরো বিরক্ত লাগছে। মানুষ এতোটা বিরক্তিকর হয় জানা ছিল না। তবুও আমার আর কোন উপায় নেই।
“দেখি আমার পাশে নীল শাড়ি পড়া কেউ আমার পড়ার টেবিলের ওই চেয়ারের উপর বসে আছে। আমার দিকে তাকিয়া মিষ্টি করে হাসলো। আমি খানিকটা চমকে গেলাম। আমি কি সুস্থ আছি! সে এখানে কেন। মাথাটা কাজ করছিল না।
“”কি ভয় পেয়েছ? ”
”তু-তুমি এখানে! ”
”হুউ, আমি। কোন সমস্যা।”
”না কোন সমস-স্যা না।”
”ভয় পেয়ে থাকলে ভাল। তা এভাবে
কেও ঘুমায়। আমিতো ভেবেছি মরেই
গেছ।”
– কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না –
– শুধু শুনে যাচ্ছিলাম –
“কেমন আছ? ”
”এ প্রশ্নটার চেয়ে যদি জিজ্ঞেস করতে
আমি এখানে কিভাবে তাহলে অবাক
হতাম না। কিন্তু এই প্রশ্নে অবাক
হয়েছি। হুউ, ভাল আছি।”
”অনেক দিন পর তোমাকে দেখলাম।
ভাল লাগছে।”
”ভাল না লাগার কোন কারণ ছিল না
তুমি অকারণে দুঃচিন্তা করো।”
”হয়তো করি। এখনো কি আগের
মতোই অবস্তা। ডাক্তার কি বলেছে?”
”উন্নতি হওয়ার কোন লক্ষণ তো নেই।
দেখা যাক কি হয়। তোমাকে এতো
কিছু না ভাবলেও চলবে।”
”তাও ঠিক। ভাবলেও বা কি হবে।””
“আর একটু বিরক্ত করি ইয়ান সাহেব। এই মেয়েটি যার কথা আপনি বলছেন তার চেহারা কি আপনি সেই মুহুর্তে দেখেছেন? ”
“হয়তো না।”
“হয়তো বলছেন কেন!”
“কারণ মানুষ খুব পরিচিত কাওকে না দেখেও চিনতে পারে।”
“তার সম্পর্কে কি জানতে পারি।”
“আমি বলতে চাচ্ছি না।”
“আপনার ইচ্ছা। তারপর কি হলো?”
এবার কেমন যেন বিরক্তিটা আগের মতো রইল না। বলতে শুরু করলাম
“”হুউ তাইতো। শুধু শুধু ভাবো।”
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না
”বৃষ্টিটা খুব ভাল লাগছে তাই না।
পুরো আকাশটা কেমন রক্তিম-হলদে
ভাব হয়ে আছে।”
“হুম। সুন্দর…. ”
” ওই গানটা মনে আছে!”
” কোনটা?”
” যদি মন কাঁদে…. ”
“তুমি চলে এসো এক বরষায়… এটা!”
“হুউ এটা। জান আমার খুব ইচ্ছা এক
সাথে আমরা জ্যোৎসনা রাতে বৃষ্টিতে
ভিজব।””
আমি শুনে যাচ্ছি ওর কথা, ওর দীর্ঘ শ্বাস। ইচ্ছে আমারও ছিল, এখন আছে। মানুষের মরণ হয় আত্তার হয় না, আর হয় না তার ইচ্ছের।
“”আর কি কি ইচ্ছে তোমার?”
“অনেক অনেক ইচ্ছে। তোমাকে এখন
বলা যাবে না। একটা লিস্ট করছি পরে
এক সাথে সব জানাব। মজার না…”
“হুউ।”
“তোমার কি মন খারাপ।”
“নাহ,আমার মন খারাপ হতে যাবে কেন..”
“কথা বলছ না যে। শুধু হুউ হুউ করছ।”
“এমনি। মাথাটা কেমন যেন লাগছে
আচ্ছা আমি কোথায়?”
“তুমি আমার খুব কাছেই আছো। কেন
আমার সাথে ভাল লাগছে না!”
“তা লাগছে। কিন্তু আমিতো ঘুমাচ্ছিলাম,
এখানে আমি…”
“এটা কিছুই না। এমনি এমনি ঠিক হয়ে
যাবে।
আচ্ছা তুমি আমার জন্য সেদিন কি
কৃষ্ণচূড়া ফুল এনেছিলে?”
“এনেছিলাম।”
“রক্তিম লাল কৃষ্ণচূড়া। আমার খুব ভাল
লাগে জানো, আমি খোঁপায় সেই লাল
কৃষ্ণচূড়া ফুল গুঁজে আছি। কিন্তু দেখ
সে ভাল লাগাটা আর… ”
“অলিকা থামো প্লিজ। আমি আর এ নিয়ে
ভাবতে চাই না..”
“সেটাইতো ভাবলে আর কি হবে। কিন্তু
মরেতো যাইনি। শুধু মাথায় হাল্কা স্টোক
হয়েছে। এ তেমন কিছু না। মরলে এমনিই
মরবো, আর বাঁচলে এমনি বাঁচব। এতো
ভেবে কি হবে।”
“আমি যেতে চাই অলিকা। আমি ফিরব
কিভাবে।”
“আচ্ছা আমি তোমাকে নিয়ে যাব। কিন্তু
সময় লাগবে। চোখ বন্ধ করো।””
তারপরই আমি আবিষ্কার করি আমি না ফিরে আপনার মতো এক উটকো লোকেরর সামনে বসে আছি।”
“তার কিছু কারণ আছে ইয়ান সাহেব। মানব মস্তিষ্ক সব সময়ই তার সমস্যার সহজ সমাধান খোঁজে। আপনি আপনার সেই অলিকার কাছে আপনার এই কল্পনার বা এই সাক্ষাতকারের কোনো মানে দাঁড় করাতে না পেরে এখন এখানে।”
“আপনার কথাগুলো বঝার চেষ্টা করছি।”
“আমি যতটুকু বুঝলাম অলকা আপনার খুবই পছন্দের একজন মানুষ। তার সাথে হয়তো আপনার দেখা করার কথা ছিল উনি আসেননি। এ নিয়ে আপনি অনেক চিন্তিত। কোনো ভাবে আপনি সত্যি জানতে পেরেছেন বা এখন পারেননি। এটা পুরোটাই আপনার অবচেতন মনের খেলা। আপনি চান চিন্তা মুক্তো হতে। তাই আপনি এখন এখানে। বুঝলেন ইয়ান সাহেব, অনুভূতি বা মায়া বা ভালবাসা সবই একটা মরিচিকার মতো আ….”
“আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আমি আমি…….”
হুম্রি দিয়ে উঠে দেখি ঘেমে ভিজে গেছি। বাইরে অনেক বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া। শীত শীত লাগছে। বিছানা ছেড়ে নামলাম। মাথাটা অনেক ব্যাথা করছে। বেছিনের ট্যাপ ছেড়ে মুখে পানি দিলাম। বুঝতে পারছি আমার ঘাম, পানি আর আমার অনুভূতি মিশে যাচ্ছে, মুছে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিলিন হতে পারেনি……