সুমাইয়া হোসেন লিয়াঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার হরিণ’ এর কথা মনে আছে? ভাবছেন কোথায় সাহিত্য আর কোথায় ফুটবল? নাহ, ভুল ভাবছেন না । লেখালেখির সাথে খেলার সম্পর্ক তেমন না থাকলেও, সোনার হরিণ এর সাথে গোল্ডেন বুটের সম্পর্ক আছে!
ফুটবল খেলায় গোল্ডেন বুট পাওয়া আর কবির ভাষায় সোনার হরিণ পাওয়া একই কথা! বরং ফুটবল খেলার অন্য যেকোনো একক অর্জনের ক্ষেত্রে গোল্ডেন বুটের কদর একটু বেশিই!
এই সোনার হরিণের ছোঁয়া পঞ্চমবারের মত পেলেন লিওনেল মেসি। বিগত ৪ বার খুব সহজেই সোনার হরিণ বার্সেলোনার এই খেলোয়াড়ের হাতে ধরা দিলেও, এইবার একটু বেগ পেতে হয়েছিল তাকে।কারণ আর কিছুইনা; একজন খেলোয়াড়। নাম মোহাম্মদ সালাহ! ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে সালাহ এবং মেসি এর লড়াই ছিল দেখার মত। দর্শকমহল তাদের দুইজনের প্রতিটি ম্যাচ দেখেছেন তার অন্যতম কারণ এই গোল্ডেন বুট। যদিও মেসির হাতে এখনো একটা ম্যাচ বাকি আছে। লিভারপুলের এই খেলোয়াড় ৩২ গোল করে ৬৪ পয়েন্ট অর্জন করেছেন এবং আছেন দ্বিতীয় অবস্থানে । মেসিকে টপকানোর জন্য তার প্রয়োজন ছিল শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা । কেননা লিওনেল মেসি ৩৪ গোল করে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে ছিলেন (এখনো আছেন) টেবিলের শীর্ষে! তাই ফুটবল জগত জানান দিয়েছে যে ২০১৭-২০১৮ মৌসুমের এই গোল্ডেন শু ফুটবলের জাদুকরের হাতেই উঠছে! ২০১৬-১৭ মৌসুমেও সর্বোচ্চ ৩৭ গোল করে তিন বছর পর ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন লিওনেল মেসি । গতবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ৩৪ গোল করা স্পোর্টিং সিপির স্ট্রাইকার বাস দোস্ক ! ২০১৬-১৭ মৌসুমের আগে শেষবার ২০১৩ সালে এই সোনালি আভা ছড়ানো গোল্ডেন বুট অর্জন করেছিলেন এই আর্জেন্টাইন তারকা । এই ২০১৭-২০১৮ মৌসুমের গোল্ডেন বুট জিতে মেসি আরেকটি রেকর্ডের পাশে নিজের নাম লেখালেন, তা হলো সর্বোচ্চ (৫টি) গোল্ডেন শু জেতার রেকর্ড!
এর আগে ২০১৬-১৭ মৌসুমে ৪র্থ বারের মত এই অর্জন ঘরে তুলেছিলেন মেসি, যে রেকর্ডের ভাগিদার ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও । কারণ তারা উভয়ই ২ জোড়া গোল্ডেন শু এর মালিক ছিলেন । কিন্তু এই মৌসুমে এসে মেসি যেন নিজের হারানো সত্তাকেই ফিরে পেতে চেয়েছিলেন! ট্রেবল জিততে না পারলেও বার্সেলোনার ডাবল জেতার ক্ষেত্রে এই খেলোয়াড়ের অবদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি। তারই ফলস্বরূপ দলীয় অর্জনের পাশাপাশি তার এই একক অর্জন! বাধাহীন অর্জনের মূল্য নেই- বলেই হয়তো এইবারের মেসি-সালাহ এর উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচগুলো বেশি উপভোগ্য হয়েছিল। তাই নিঃসন্দেহে এই অর্জন মেসির জীবনের অন্যতম সেরা অর্জনগুলোর একটি হয়ে থাকবে। এই মৌসুমে মেসি তার পায়ের যাদুতে অনিন্দ্যসুন্দর কাব্য রচনা করেছেন বিধায় ‘গোল্ডেন বুট’ নামক সোনার হরিণ তাঁরই প্রাপ্য!
এলএম১০, দি লিও মেসিকে জানাই অভিনন্দন এবং সালাহ এর প্রতি রইলো শুভকামনা।