লেখকের নামঃ রোহান অর্পন
ছোটবেলা থেকে আমার অনেকগুলো বদ অভ্যাস ছিলো। ক্লাসে পড়া না পারা থেকে মাষ্টার মশাইয়ের বিড়ির প্যাকেট ফেলে দেয়া, পড়াশোনা না করে পরীক্ষায় পাশ করা, দাঁত ব্রাশ না করে নাস্তা খাওয়া আরো ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে দিনে তিনবার আমি গোসল করতাম। সকালে একবার স্কুলে যাওয়ার আগে, স্কুল থেকে এসে কারণ সেখানে আমার ক্লাসমেটগুলো খুবই অপরিচ্ছন্ন ছিলো এবং বিকালে ফুটবল খেলে এসে। আমার ক্লাস মেট রা কখনো আমার বন্ধু হতে পারেনি। ঢাকা ছেড়ে হৃদয়পুর যাওয়ার পর ভালো কোনো বন্ধু পাইনি আমি। ঢাকার বন্ধুদের কবে ফিরে পাবো সেই অপেক্ষার প্রহর গুনতাম। বন্ধু না পাওয়ার সম্পূর্ণ দোষ আমার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ঐযে আমার কিছু বদ অভ্যাস রয়েছে। আমার সামনে বসে মেয়ের বাবা বিড়ি ফুকছে। একসময় এই বিড়ির প্যাকেট গুলো ফেলে দিতাম। এখন আফসোস করি ফেলে না দিয়ে নিজের কাছে রাখলে একটা কোম্পানি হয়ে যেতো।
মেয়ের বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলো “সিগারেট খাও?”
“জ্বি না”
“গুড ” “ভেরি গুড” “কিন্তু আমি তো জানি ইঞ্জিনিয়ার রা সিগারেট ছাড়া চলতেই পারে না”
আপনি ভুল জানেন ”
মেয়ের বাবা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালেন। আমি মুখের উপর কথা বলে চিপায় পরে গেলাম। এখন নিকাহ করার মতো সময় আমার না। তবুও মামা সেটা বুঝতে চায় না। দোতলা ঘরের দেয়ালে কিছু পেইন্টিং আমি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি। “হুম ওগুলো আমার মেয়ের আকাঁ ছবি ” আমি মেয়ের বাবার চোখে চোখ রেখে মনে মনে চার পাচঁ টা ইন্টারেস্টিং গালি দিলাম। বিখ্যাত শিল্পী দের পেইন্টিং নিজের মেয়ের নামে চালিয়ে দিলো উনি। ঠকবাজ। আমি হাসি দেওয়ার অভিনয় করলাম।
“আচ্ছা কাকা আপনি আর কি কি জানেন ইঞ্জিনিয়ার দের সম্বন্ধে?”
“এই তো তারা বিড়ি খায়, তাদের চুল উষ্কখুষ্ক থাকে, সপ্তাহে নাকি একবার গোসল করে আরো কতোকি। কিন্তু তুমি বাবা পুরাই অন্যরকম।”
আমি তার কথার সাথে তাল মিলিয়ে হাসলাম। মেয়ের বাবা মেয়ের মা কে ডাক দিলেন।
“এই সামিয়ার মা, সামিয়া কে ডাক দাও” একটুপর লম্বাচুরা একটা মেয়ে হাতে চা বিস্কিটের ট্রে নিয়ে লাজুক সাজার ভান করে আসলো। “স্লামালেকুম” এলাকার চেয়ারম্যান রা যেভাবে মাথা নাড়িয়ে সালাম নেয় আমি সেভাবে সালাম নেয়ার চেষ্টা করলাম।
বিনয়ের সাথে বললাম “বসুন”
তিনি আমার পাশে বসে পড়লেন।
আমার চোখ এখন চড়কগাছে। মেয়ের বাবা বলেন এপাশে এসে বসো মা। কিন্তু মনে মনে যে মেয়ের নামের আগে পরে কতোগুলো গালি দিয়েছে তা মুখ দেখলেই বুঝা যায়।
তারপর তিনি আমার পরিচয় দিতে লাগলেন। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার “মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার” দেশের বাইরে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ে এসেছে।
মেয়ের মুখে উজ্জ্বল হাসি। আরেকটু হলেই আমার গায়ের উপর পরে যাবে অস্থির অবস্থা। তিন টা বাক্যে যে আমাকে বর্ণনা করা যায় আমি এর আগেও জানতাম না।
বেশ চমৎকার! আপাতত এই তিন বাক্যের মধ্যেই আমি সীমাবদ্ধ। মেয়ের বাবা ইশারা দিয়ে আমাকে চা নিতে বললো। আমি ভদ্রমতো চায়ের কাপে ফু দিয়ে চা পান করতে লাগলাম। অত্যন্ত বেমজা চা। মাগনা দিলেও এই চা খাওয়ার পাত্র আমি নই। আমি চা পানের ক্ষেত্রে খুবই শৌখিন। বড়মাপের চাখোর আর্টিস্ট ও বলা যায়। তবুও কষ্ট করে দুই তিন ঢোক গেলার পর মিথ্যে শুনাম করে চা রেখে বিস্কুট খাওয়া শুরু করলাম।
মেয়ের বাবা বললো “তোমরা একটু একা টাইম পাস করো? ” কী বলো ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ?
“জ্বী আচ্ছা”
এই সামিয়া, ওকে উপরে নিয়ে যা।
আসুন আমার সঙ্গে..
উপরের তলা টা বেশ গোছানো। মেয়ের বিবাহের জন্যই গুছিয়েছেন নিশ্চয়। কে জানে আমার আগে আর কতো পাত্র এখানে ঢুকে হাফ ছেড়ে ছাড়া পেয়েছে।
সামিয়া তার মাথার কাপড় ফেলে দিলেন। ভেজা চুল। মেয়ে অসম্ভব সুন্দরী কিন্তু জিরো ট্যালেন্ট। “বিউটি উইদাউট ব্রেইন ” তার প্রমাণ হচ্ছে আমার সামনেই তার ভেজা চুল ঝাড়লেন এবং তার চুলের পানি ছিটকে আমার সাদা শার্ট ভিজে গেলো। “ওহ আই এম এক্সট্রিম্লি সরি!” “আসলে আমি বুঝিনি যে আমার চুল এতোটাই ভেজা ছিলো।” তাড়াহুড়োয় ছিলাম তো আর হেয়ার ড্রায়ার টাও নষ্ট তাই চুল শুকানোর সময় পাই নাই ” আমি, “আরেহ কোনো সমস্যা নেই” “তেমন কোনো বড় ব্যাপার নয়” “তেমন বেশী ভিজে নাই ” “আপনি বরং আপনার হেয়ার ড্রায়ার টি নিয়ে আসেন, আমি ঠিক করে দেই ” মেয়েটা বললো, “আপনি কিভাবে ঠিক করবেন? ” ওহ আপনি তো আবার ম্যাকানিকেল ইঞ্জিনিয়ার ” “অবশ্যই পারবেন” “দাঁড়ান আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি ” “আপনি তো জোশ! আরও কিছু ঠিক করতে পারেন নাকি? দেখেন না আমার মন টাকে ঠিক করতে পারেন কিনা ” আমি বললাম “অবশ্যই আমি আরো অনেক কিছুই ঠিক করতে পারি!” “ফ্যান, লাইট, এসি, টিভি এসব ঠিক করাই তো আমার কাজ ” “মানে, মানে আপনে না ইঞ্জিনিয়ার? ” ইঞ্জিনিয়ার রা এসব করে নাকি? ” করতেও পারে। আর আমি কখনো তো বলিনি আমি ইঞ্জিনিয়ার” আপনার বাবাকে জাস্ট ম্যাকানিক বলার সাথে সাথেই তো আপনার বাবা ধরে নিলো ওহ তুমি ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার? ”
” আপনিই বলেন, আমি কি বড়দের মুখে মুখে কথা বলতে পারি? একদিন নাহলে ম্যাকানিকেল মিস্ত্রী ম্যাকানিকেল ইঞ্জিনিয়ার ই হলো! কারও ক্ষয়ক্ষতি তো হয় নাই!…..