ছোট গল্প- ধোঁয়াশা…..
রোহান অর্পনঃ আমি আর মৃদুল টিএসসিতে বসে আছি। মৃদুলের হাতে মালটার চা। আমার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। আমি আর মৃদুল কেউ ই সিগারেট খাই না।কখনো খাবো কি না বলা যায় না। আজকে সিগারেট টা জ্বালানোর পেছনে বিশেষ কারণ আছে…..
মেয়েঘটিত ব্যাপারে সিগারেট জ্বালালে নাকি বুকের ব্যথা ট্যথা কমে। আমি সিগারেট জ্বালাতে পারি না। এক রিক্সাওয়ালা মামা কে দিয়ে সিগারেট টা জ্বালিয়েছি। আমি সিগারেট এর দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। দুই সপ্তাহ পর মৃদুলের প্রেমিকার বিয়ে। বর নিঃসন্দেহে মৃদুল নয়। মৃদুল হলে আমরা এখানে বেকারের মতো বসে থাকি না। হয়তোবা শপিং এ যেতাম। আমার চয়েজ আবার ভালো। মৃদুল হয়তো আমাকে দিয়েই তার অর্ধাঙ্গীর জন্য শাড়ি কেনাতো। সব শুধু দুঃস্বপ্নই রয়ে গেলো। মৃদুল আজ পর্যন্ত তার মুখে তার বুকের কষ্ট আমার সাথে শেয়ার করেনি। হয়তোবা তার বুকে কোনো সিন্দুক আছে। সেখানে তার জমানো কথা গুলো তালাবদ্ধ। আমি মৃদুলের সাথে প্রায়ই হাসিঠাট্টায় মেতে তার ভেতরের লুকানো কথা গুলো বের করার চেষ্টা করি। কিন্তু শালা দামী ব্র্যান্ড এর তালা ব্যবহার করে। “মৃদুল!” “চল অবনী কে ভাগাই নিয়ে আসি” বরাবরের মতো মৃদুল আমার কথা টা ঠাট্টা হিসেবেই নিলো। সে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
“ঐ মৃদুল!” ” তুই কী তোর চোখের সামনে অবনী রে হারাইতে চাস?” মৃদুল চুপ করে রইলো। আমার হাতের সিগারেট টা এখনো জ্বলছে। প্রায় শেষের দিকে। কিছুক্ষন পর সিগারেট টা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলো। ছাইগুলো পড়ে রইলো। অবশিষ্টাংশ আমার হাতে এখনো…..
“আচ্ছা শুভ্র তুই কি জানিস সিগারেটের ধোয়াগুলো কেন উড়ে যায় আর ছাই গুলো কেন রয়ে যায়?” “তোর জানার কথা ” “তুই ফিজিক্সের স্টুডেন্ট” “হুম জানি” ধোয়া গুলো উড়ে যায় কারণ হলো…. আমাকে সাথে সাথে মৃদুল থামিয়ে দেয়। তোর ফিজিক্সের ব্যখ্যা আমি শুনতে চাই না।
সিগারেটের সাথে আমার ফিলোসফি কি জানিস?
“কী?” অবনী আমার জীবনে ছিলো সিগারেটের ধোঁয়া।
ওকে এক সময় আমি হারাবো ভালোবাসার সেই প্রথম থেকে জানা।
ভালোবাসার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। যেকোনো সময় আসতে পারে। যার তার জন্য অনুভব হতে পারে। অবনীর রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো সিগারেটের ছাইয়ের মতো। মনের কোনো এক কোণায় পড়ে থাকবে। আর আমি অবশিষ্টাংশের মতো সেই ছাই গুলো নিয়ে নিঃশেষ হয়েও প্রকৃতির নিয়মে বেঁচে থাকবো।