কিশোর লেখক ’’ আবু হুরায়রা ফাহিমের ছোট গল্প “বার্ধক্যের অ‌ভিশাপ’’

আবু হুরায়রা ফাহিম:-

পৌষ মা‌সের কনক‌নে এক বি‌কেল। সূর্যটা তির্যকভা‌বে কিরণ দি‌চ্ছে জানালায়। অা‌নিস টে‌বি‌লে ব‌সে অ‌ফি‌সের ফাইলগু‌লো দেখ‌ছে।

এমন সম‌য়েই মায়ের ডাক,”অা‌নিস,ও অা‌নিস,একটু শু‌নে যা তো বাবা।

“”ধুর, এখন অাস‌তে পারব না,‌কি হ‌য়ে‌ছে?

“”একটু পা‌নি দে তো,বাবা।

“”এত ঢং‌য়ের কি হল,ওখা‌নেই তো অা‌ছে,নি‌য়েই খাও না!

এমন সম‌য়েই রিপা ঘ‌রে ঢুক‌তে ঢুক‌তে বলল,”‌তোমার মা তো কেবল খান অার শু‌য়ে থা‌কেন। সংসা‌রের খরচ যে কত বে‌ড়ে যা‌চ্ছে,তার কি সে খেয়াল অা‌ছে ! সুমনা ভাবীর শাশু‌ড়ি‌কে উনারা বৃদ্ধাশ্র‌মে রে‌খে এ‌সে‌ছেন।‌ দেখ গে ,‌ তিনি কত ভা‌লো অা‌ছেন ! অার তোমার মা তো একটা . . . বল‌তে গি‌য়ে থে‌মে গেল রিপা।পা‌শের ঘ‌রে চ‌লে গেল।

অা‌নিস ক‌দিন ধ‌রে বেশ চি‌ন্তিত। মা দিন দিন বির‌ক্তিকর হ‌য়ে উঠ‌ছেন।‌ রিপ‌ার সা‌থে প্রায়ই না‌কি ঝগড়া ক‌রেন।‌ রিপা ও তাই ই ব‌লে। সে ভাব‌ছে মা‌কে বৃদ্ধাশ্র‌মে পা‌ঠি‌য়ে দে‌বে। এ‌তে ঝা‌মেলাও কম‌বে অার সবাই ও ভালো থাক‌বে।

১ সপ্তাহ পর সবগু‌লো ব্যাগ গোছা‌তে গোছা‌তে অ‌নেক দে‌রি হ‌য়ে গেল। সবগু‌লে‌া ব্যাগ রিপ‌া নি‌জে গু‌ছি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে।অাজ তার শাশু‌ড়ি‌কে বৃদ্ধাশ্র‌মে রে‌খে অাসা হ‌বে। ম‌নে ম‌নে ভীষণ খু‌শি সে। অাপদটা বি‌দেয় হ‌চ্ছে তাহলে ! ত‌বে বাই‌রে তা‌কে খুব দুঃ‌খিত ম‌নে হ‌চ্ছে।

অা‌নি‌সের মা যাওয়ার অা‌গে বল‌লেন,….

“‌তোমরা সবাই ভা‌লো থে‌কো”…….

তার চোখ থে‌কে অ‌বিরাম জলধারায় পা‌নি পড়‌ছে। তা‌তে কা‌রো ভ্রু‌ক্ষেপ নেই। অা‌নিস মা কে গা‌ড়ি‌তে তু‌লে দি‌লেন। গা‌ড়ি ছু‌টে চলল নিজ গন্ত‌ব্যের দি‌কে।

১৭ জানুয়ারী,১৯৯৭ -হ্যা‌লো -হ্যা‌লো,

কে বল‌ছেন? -অা‌মি পদ্মকানন বৃদ্ধাশ্রম থে‌কে বল‌ছি।

অাজ সকা‌লে অাপনার মা মারা গে‌ছেন।

‌কিছুক্ষ‌ণের জন্য স্তব্ধ হ‌য়ে গেল অা‌নিস।স‌ম্ভিত ফিরে পেতেই বলল -অা‌মি অাস‌ছি। অা‌নি‌সের মা‌য়ের লাশটা গ্রা‌মেই নেয়া হল। ওখা‌নেই কবর দেয়া হল তা‌কে। মা‌কে মা‌টি দি‌য়ে পর‌দিনই অা‌নিস ঢাকায় চ‌লে এল। জীব‌নের ব্যস্ততায় সে মা‌য়ের মৃত্যুর কথা ভু‌লে গেল। কিন্তু কেউ জানল না,কতটা একাকী‌ত্বের কস্টে মৃত্যু হ‌য়ে‌ছে হা‌লিমা বেগ‌মের।

১৬ ই ফেব্রুয়ারী,২০১৭ অা‌নিস বারান্দায় ব‌সে অা‌ছে। শীতটা এবার বেশ ভা‌লোই প‌ড়েছিল। এখন অাবার কম‌তে শুরু ক‌রে‌ছে। ত‌বে বু‌ড়ো শরী‌রে নির্মল বাতাসও যেন কাঁপন ধ‌রি‌য়ে দেয়।‌ রিপা মারা গে‌ছে পাঁচ বছর হল। মা‌ঝে মা‌ঝে ওর কথা ভীষণ ম‌নে প‌ড়ে। হুইল চেয়ারটা নি‌য়ে বাগা‌নের দিকটায় এ‌গি‌য়ে গেল অা‌নিস।‌ গোলাপ,‌বেলী,‌ শিউলি অা‌রো কত ফুলের গাছ!বাগানটার পা‌শেই বিশাল সাইন‌বোর্ড।

“পদ্মকানন বৃদ্ধাশ্রম। “‌নি‌জের সন্তান‌দের কথা ভ‌ীষণ ম‌নে পড়‌ছে অা‌নি‌সের।বু‌কের বা পাশটা হঠাৎ ভীষণ ব্যাথায় কুক‌ড়ে উঠল। হঠাৎ ভা‌রি একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ হল।‌ কেয়ারটেকার র‌বি দৌ‌ড়ে এ‌লে।নেই,অা‌নিস অার নেই। প্রকৃ‌তি জীব‌নের সব সমীকর‌ণের ফলাফল শূন্য রাখ‌তেই ভা‌লোবাসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

ছোট গল্প–ধোঁয়াশা

ছোট গল্প- ধোঁয়াশা…..  রোহান অর্পনঃ আমি আর মৃদুল টিএসসিতে বসে আছি। মৃদুলের হাতে মালটার চা। আমার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। আমি আর মৃদুল কেউ ই সিগারেট খাই না।কখনো খাবো কি না বলা যায় না। আজকে সিগারেট টা জ্বালানোর পেছনে বিশেষ কারণ আছে….. মেয়েঘটিত ব্যাপারে সিগারেট জ্বালালে নাকি বুকের ব্যথা ট্যথা কমে। আমি সিগারেট জ্বালাতে পারি না।