দেবী সিনেমা

তবে দেবী সিনেমা কি একটি কম্পলিট প্যাকেজ…?

সমালোচকঃ- রোহান অর্পন

দেবী সিনেমা-মিসির আলি অনেক বড় মাপের মানুষ। উনাকে নিয়ে কিছু বলতে নিলেও বলবে আমার কথায় লজিক নাই। রহস্যজগৎের সর্বশেষ পর্যায়ে তিনি যেন অবস্থান করছেন। তবে আজকের লেখা মিসির আলি কে নিয়ে নয়। দেবী চলচিত্র নিয়ে। আমরা সবাই জানি দেবী চলচিত্র টি কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন

আহমেদ এর দেবী উপন্যাসের অবলম্বনে নির্মিত। সপ্তাহখানেক আগে মুক্তিপেয়েছে৷ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো দ্বিতীয় দিন। সিনেমাহলে উপচে পরা ভীড় বটে।

একটা উপন্যাস কে সিনেমাতে রূপ দিতে হলে মাথার সাথে সাথে শরীর ও খাটাতে হয়। আমার মনে হয়েছে দেবী চলচিত্রে প্রত্যেক টা আর্টিস্ট থেকে শুরু

করে পোস্ট প্রসেসিং এ যে ব্যক্তি কালার গ্রেডিং করেছেন, তারা সবাই তাদের বেস্ট টা দেয়ার ট্রাই করেছেন।

ক্যামেরার কাজ দারুণ লেগেছে।তবে আহামরি যে তা বলবোনা। তার চেয়ে ডুবের সিনেমাটোগ্রাফি ভালো লেগেছে বেশী।

মূলগল্পের সাথে চিত্রনাট্যের ক্যামিস্ট্রি ভালোছিলো। তা না হলে ক্যারেকটার গুলোকে জীবন্ত মনে হতো না।

অনম বিশ্বাসের পরিচালনা নিয়ে বলার কিছু নেই। কারণ তার কাজ এর আগে দেখা হয়নি।

প্রথম চলচিত্র অনুযায়ী তার ভূমিকায় এক্কেবারে বাজিমাত! সিনেমার অন্যান্য ইলিমেন্ট এর মধ্যে লোকেশন গুরুত্বপূর্ণ।

মিসির আলীর রুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের দৃশ্য গুলো হুবহু আমার কল্পনার সাথে মিলে যায়। সুতরাং যাদের উপন্যাস পড়া ছিলো তারা খুব সহজেই ব্যাপার গুলো রিলেট করতে পেরেছে।

বাকি রইলো দেবীর কাস্টদের ভূমিকার কথা। এর আগে বলে নেই। মিসির কিন্তু এই প্রথম পর্দায় নয়। এর আগেও মিসির আলি চরিত্র নিয়ে নাটক তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। ব্যাপকভাবে তেমন সারা পায়নি ।

দেবী চলচিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলো রানু। অনেকে মন্তব্য করছেন মিসির আলী সিরিজের মুভিতে মিসির আলির উপস্থিতি স্ক্রিন অন টাইমে কম কেন?

মিসির আলীর ভূমিকা অবশ্যই এখানে অনেক বেশী কিন্তু এই উপন্যাসে দেবী কে কেন্দ্র করেই সব ঘটনার উপক্রম হয়েছিলো।

তাই চলচ্চিত্রেও তা স্থান পেয়েছে।

জয়া আহসান ( রানু) : মাই গড! এই নারী কখনো আমাদের কে নিরাশ করে না! পারফেশনের অন্য নাম হলো জয়া আহসান। আফটার অল আমার চাইল্ডহুড ক্রাশ বলে কথা।

রানু চরিত্রে বাংলাদেশের অন্যকোনো অভিনেত্রী এতো বিস্ময়কর অভিনয় করতে পার‍তো না! আই বেট।

রানু চরিত্রের সেই রহস্যময় হাসি, হাতের অঙ্গভঙ্গি, চাহনি সব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি । হ্যাটস অফ! আমি সম্ভবত উপন্যাস পড়ার সময় জয়ার মতোই কাউকে ভাবছিলাম।

রানুর মতো এতো সেনসিটিভ একটা চরিত্র কে ধারণ করাও বড় ব্যাপার আর বয়সের খেলা টাও দারুণ ভাবে খেলা হয়েছে মুভি তে! ডায়লগ ডেলিভারীর

স্টাইল দেখেও আমি ক্রাশিত হয়েছি। ……..জাস্ট এমাজিং।

মিসির আলী ( চঞ্চল চৌধুরী) : মিসির আলী ফ্যান দের আফসোস একটাই মিসির আলীর স্ক্রিনটাইম কম।

উপন্যাসে দেখা গেছে মিসির আলী বেশ রোগা পাতলা একজন মানুষ, চুলগুলো উষ্কখুষ্ক, চেইনস্মোকার।

আর এই মিসির আলী চরিত্র কে যেন পা থেকে মাথা পর্যন্ত ধারণ করে অভিনয় করেছেন মিষ্টার পারফেকশনিস্ট চঞ্চল চৌধুরী। কন্ঠের গুরুগম্ভীরতা,

দীপ্তপায়ে ভার্সিটির করিডোর দিয়ে হেটে যাওয়া যেন উপন্যাসের মিসির আলীর প্রতিফলন।

নীলু চরিত্রের ভূমিকায় ছিলে শবনম ফারিয়া। তার প্রথম ফিল্ম অনুযায়ী নিজের বেস্ট টাই দিয়েছেন অভিনয় দেখলেই বোঝা যায়।

নীলু চরিত্র টা রানু চরিত্রের মতো ততো টা সেনসেটিভ না হলেও বেশ মিনিমালিস্টিক। এই চরিত্রে শবনম কে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন লেগেছে সিনেমার ক্লাইমেক্স পর্যায়ে ।

সাপোর্টিং রোলে আনিস চরিত্র টাতে অনিমেষ আইচ কে বেশ লেগেছে। আনিস নামের হ্যাংলা পাতলা লোকটার স্ত্রীর জন্যে ভালোবাসা, রানু কে কঠিন সিচুয়েশন গুলো তে সাপোর্ট করা ফুটে উঠেছে। খুব পজিটিভ একটা চরিত্র ছিলো এটি।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ন চরিত্রে সাবেত হিসেবে ছিলো ইরেশ যাকের। মুভির খলনায়ক চরিত্রের ভূমিকা পালন করেছেন।

স্ক্রিন টাইমে সবচেয়ে কম ছিলেন। তবে যতোক্ষনই ছিলেন, দর্শক দের বেশ ইন্টেন্স মূহুর্তে রেখে গেছে।

তবে এই ক্যারেকটার টি দিয়ে উন্নয়নের আরও দিক ছিলো। দেবী উপন্যাসের ছোটখাটো দিক গুলো বেশ কাটঝাট করা হয়েছে।

প্রোডাকশন, পোস্ট প্রোডাকশন, প্রচারণা,মার্চেন্ডাইজিং কোনো কিছুতেই কমতি রাখেনি প্রযোজক জয়া আহসান এবং পরিচালক অনম বিশ্বাস।

পরিশেষে বলা যায় দেবী একটি কম্পলিট প্যাকেজ ও আদর্শ সিনেমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*